বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারের প্রান্তে বসে ছিল পিয়াস, একজন প্রতিভাবান বিজ্ঞানী। তিনি সর্বদা নতুন কিছু আবিষ্কারের স্বপ্ন দেখতেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল "ক্যালিবার" নামে একটি যন্ত্র, যা সময়ের গতির দিকে পিছনে ফিরে দেখার ক্ষমতা রাখে। গবেষণাগারে দিনরাত কাজ করে তিনি অবশেষে এক সফল মডেল তৈরি করতে সক্ষম হলেন।
পিয়াসের এই আবিষ্কারটি শুধু তার জন্য নয়, মানবতার জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে চলেছিল। তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন, কীভাবে এই যন্ত্রের মাধ্যমে মানুষ নিজেদের অতীতে ফিরে যেতে পারবে।
একদিন, পরীক্ষার জন্য পিয়াস তার নতুন যন্ত্রটি চালু করলেন। যন্ত্রটি শুরুর সাথে সাথে একটি আলো ছড়িয়ে পড়তে লাগল। কিছু মুহূর্ত পর, সে দেখতে পেল, তার নিজের অতীতে একটি দৃশ্য। সেখানে তার পরিবারের সঙ্গে আনন্দময় মুহূর্ত কাটাচ্ছে।
“এটা তো আশ্চর্যজনক!” পিয়াস চিত্কার করে উঠল। সে আনন্দিত হয়ে ভাবতে লাগল, সে সময়কে ধরে রাখতে পারবে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে, যন্ত্রটি আবার একটি নতুন দৃশ্য দেখাতে শুরু করল।
যখন পিয়াস একটি ঘটনার দিকে তাকাল, সেখানে সে নিজেকে একটি অচেনা স্থানে দেখল। সেখানকার পরিবেশ ভিন্ন ছিল—চারপাশে অনেকে ছিল, কিন্তু তারা সবাই মুখ ঢেকে রেখেছিল। পিয়াসের মনে প্রশ্ন উঠল, “এটা কোথায়? আমি এখানে কখন এসেছি?”
সে কিছু বোঝার চেষ্টা করছিল, কিন্তু অল্প সময় পর দৃশ্যটা বদলে গেল।
অধ্যায় ৪: ভিন্ন সময়ের অভিজ্ঞতা
এরপর থেকে, পিয়াস নিয়মিতভাবে যন্ত্রটি চালু করতেন এবং প্রত্যেকবার তিনি তার অতীতে নিজেকে এক নতুন অবস্থানে দেখতে পেতেন। কখনও এক সেমিনারে, কখনও বন্ধুদের সাথে আড্ডায়। কিন্তু অচিরেই তিনি দেখতে পেলেন, কিছু দৃশ্য তার মনে পড়ছিল না।
“কী হচ্ছে? আমি তো কখনো সেখানে যাইনি!” পিয়াস আতঙ্কিত হয়ে উঠলেন। মনে হতে লাগল, কোনো এক অজানা শক্তি তাকে অদৃশ্যভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
এখন পিয়াস বুঝতে পারছিল, তার আবিষ্কৃত যন্ত্র হয়তো তার মনে কিছু অদ্ভুত পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, তাকে সত্যি সত্যি জানার জন্য গবেষণা করতে হবে।
তিনি পুরনো নথি এবং ডায়েরি দেখতে শুরু করলেন, যেখানে তিনি তার জীবনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছিলেন। অজান্তেই তিনি এক অদ্ভুত পৃষ্ঠার উপর এসে পড়লেন। সেখানে লেখা ছিল, “ক্যালিবার ব্যবহার করলেই সত্য বেরিয়ে আসে। কিন্তু সতর্ক থাকো, অতীত কখনো মিথ্যা বলবে না।”
পিয়াস ভাবতে লাগলেন, তার জীবনের মধ্যে যে সব অজ্ঞাত ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর কি কোনো যোগসূত্র রয়েছে? তিনি আবার যন্ত্রটি চালু করলেন এবং নিজেকে একই অচেনা স্থানে দেখলেন। তবে এবার, সেখানকার মানুষগুলো পিয়াসের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল।
“তুমি এখানে কেন?” একজন মুখঢাকা ব্যক্তি প্রশ্ন করল।
“আমি জানি না! আমি এখানে কেন এসেছি?” পিয়াস উত্তর দিলেন।
তারা তখন পিয়াসকে বলল, “তুমি অতীতে গিয়েছ, কিন্তু অতীত কখনো তোমাকে ভুলে যাবে না। তুমি যা দেখছ, তা তোমার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।”
“আমি কি করব?” পিয়াস ভয়ে বলল।
“তুমি যদি সত্য জানতে চাও, তবে আবার চেষ্টা কর। কিন্তু সতর্ক থেকো, কারণ তুমি যা দেখতে পাবে, তা তোমার জীবন বদলে দিতে পারে।”
পিয়াস তীব্র সংকল্প নিয়ে যন্ত্রটি আবার চালু করলেন। এবার সে নিজেকে একটি ঘটনার মধ্যে দেখতে পেল, যেখানে সে একটি মিটিংয়ে ছিল। সেখানে তার বন্ধুরা তার সম্পর্কে আলোচনা করছিল।
“পিয়াসের আবিষ্কারটি আমাদের জন্য বিপজ্জনক!” একজন বলল।
এখন পিয়াসের মনে হল, তিনি কিছু ভুল করেছেন, যা তার বন্ধুরা জানে। কিন্তু তিনি জানতেন না, কী।
অধ্যায় ৯: আত্মপরিচয়ের সন্ধানে
পিয়াস তার আবিষ্কারের দিকে আবার নজর দিতে শুরু করলেন। যন্ত্রটি সত্যি সত্যি সময়ের ওপর প্রভাব ফেলছে কি না, তিনি সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে চাইলেন। তিনি তার বন্ধুদের সাথে কথা বলতে গেলেন।
“আমি তোমাদের কাছে কিছু জানতে চাই। আমি কি কখনো ভুল কিছু করেছি?”
তার বন্ধুরা অবাক হল। “পিয়াস, তুমি তো আমাদের সাহায্য করেছ। তবে তুমি কিছু গোপন রেখেছ?”
এখন পিয়াসের মনে সন্দেহ শুরু হল। “গোপন? কিসের গোপন?”
পিয়াস আবার যন্ত্রটি চালু করলেন, এবং এবার তিনি দেখলেন, তিনি একটি হত্যাকাণ্ডের দৃশ্যের মধ্যে ছিলেন। সেখানেই তিনি একজনকে দেখতে পেলেন, যে তার পরিচিত ছিল।
“এটা কী? আমি তো এখানে আসিনি!” পিয়াস চিৎকার করে বললেন।
“তুমি হয়তো আসবে,” এক অশরীরী কণ্ঠ ভেসে এলো। “তুমি যে সময়ের মধ্যে ঢুকেছ, সেখানে তুমি তোমার অতীতের সকল সত্য জানতে পারবে।”
পিয়াস ভয়ে ভেঙে পড়লেন। কিন্তু তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি সত্য জানতে পারবেন। তিনি জানতেন, যত কঠিনই হোক না কেন, সত্য জানাটা জরুরি।
পিয়াস শেষ পর্যন্ত তার বন্ধুর সাহায্যে জানতে পারলেন, তার আবিষ্কৃত যন্ত্রটি সময়ের স্রোতে একটি গণ্ডগোল তৈরি করেছে। কিছু বন্ধুরা তাকে মিথ্যা বলেছিল, কারণ তারা তার আবিষ্কারকে লুট করতে চেয়েছিল।
“এখন আমি বুঝতে পারছি, আমি কেন অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিলাম। কারণ আমি সত্যের খোঁজে বেরিয়েছিলাম,” পিয়াস বললেন।
পরিশেষে, পিয়াস ঠিক করলেন, তিনি এই যন্ত্রের মাধ্যমে সময়ের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আনবেন না। বরং, তিনি এটিকে মানুষের কল্যাণের জন্য ব্যবহার করবেন।
তিনি তার বন্ধুকে বললেন, “আমরা এখন সত্য জানি। আমরা একসঙ্গে কাজ করব এবং সময়ের ইতিহাসকে বদলে দেব না।”
অধ্যায় ১৩: সময়ের নতুন সংজ্ঞা
এখন পিয়াসের নতুন যাত্রা শুরু হলো। তিনি সময়ের স্রোতে নতুন দিগন্তের সন্ধানে বের হলেন। তার গবেষণা মানুষের মাঝে নতুন সত্যের প্রতিফলন ঘটাবে।
এভাবে, পিয়াস তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে শিখলেন, সময় শুধু একটি ধারাবাহিকতা নয়, বরং এটি সত্যের একটি সমাহার। তার যাত্রা এখানেই শেষ নয়, বরং শুরু হয়েছে নতুন এক অধ্যায়ে, যেখানে সত্য ও মিথ্যার মাঝে একটা অসীম চক্র চলতে থাকবে।
0 মন্তব্যসমূহ