স্মৃতির ছায়ায় |
রাহুল একজন সাদা মেঘের মতো, যার জীবনের কোনো দিক নেই। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা, একটি পুরনো বাড়ির ছাদে বসে স্মৃতির স্রোতে ভাসতে ভাসতে কাটে। সে বুঝতে পারে, একাকীত্বের মাঝে তার মনের কোণে শুধু একটি নাম ঘুরে বেড়ায়—সায়নী। তাদের সম্পর্ক ছিল সবচেয়ে সুন্দর, কিন্তু জীবন কখনো কখনো এভাবেই মজা করে।
সায়নী ছিল রাহুলের কলেজের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। তাদের সম্পর্কটা ছিল বন্ধুতা, কিন্তু ধীরে ধীরে তা প্রেমে রূপ নেয়। একে অপরের পাশে থাকার সময়গুলো, বইয়ের পাতা উল্টানো, পছন্দের গান গাওয়া, আর সেই প্রথম হাত ধরে হাঁটা—সবকিছু যেন রাহুলের চোখের সামনে ফ্ল্যাশব্যাকের মতো চলতে থাকে।
কিন্তু জীবনের পথচলা কখনো সরল হয় না। সায়নী হঠাৎ করে পরিবারের চাপের কারণে অন্য শহরে চলে গেল, আর সেখানকার একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করল। রাহুলের জন্য সেই বিদায়টা ছিল কঠিন। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, দূরত্ব তাদের সম্পর্ককে ভেঙে দেবে না। কিন্তু বাস্তবতা কখনো কখনো নিষ্ঠুর।
কয়েক মাস পর, সায়নী থেকে এক অদ্ভুত মেসেজ পেল। “রাহুল, আমার জন্য দোয়া করো। আমি অন্য কাউকে পছন্দ করতে শুরু করেছি। তুমি জানো, আমার পরিবারের কথা। আমি তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যেতে পারি না।”
রাহুলের হৃদয় হুহু করে উঠেছিল। সে ভাবল, তার ভালোবাসা কি এত সহজে ভেঙে যেতে পারে? তবুও, সায়নীর সুখের জন্য সে নিজের অনুভূতিকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করল। সে মেসেজে লিখল, “আমি তোমার জন্য সব সময় এখানে আছি। তুমি যা ভালো বুঝবে, সেটাই করো।”
সায়নী যখন বিয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করল, রাহুলের মধ্যে এক ধরনের দুঃখ জমে গেল। সে বুঝতে পারল, প্রেম কখনো কখনো সত্যিকার অর্থে একতরফা হয়।
কালের সাথে সাথে রাহুলের জীবন যেভাবে চলছিল, সায়নী তার জীবনে অনেক এগিয়ে গেছে। বিবাহিত জীবনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল, আর রাহুল তার স্মৃতি নিয়ে একাকী ছিল। সে নিজেকে সারাক্ষণ কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করলেও, তার মনে সায়নীর স্মৃতি সব সময় তাড়া করত।
বিয়ের দিন, রাহুল সায়নীর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে। সে তখন একজন অন্য পুরুষের হাতে হাত রেখে হাসছে। রাহুলের চোখে অশ্রু এসে যায়। সে ভাবছিল, যদি সায়নী তার জীবনে ফিরে আসতো! কিন্তু বাস্তবতা জানিয়ে দেয়, স্মৃতি আর ভালোবাসা দুটিই সময়ের সাথে সাথে বদলে যায়।
দু-তিন বছর পর, একদিন রাহুল একটি পুরনো ক্যাফেতে যায়। সেখানে সায়নী দেখা দেয়। তার পাশে সেই পুরানো বন্ধু, যার সাথে রাহুলের কথা হয়েছে। সায়নী বলল, “রাহুল! কেমন আছ?”
রাহুল কিছু সময়ের জন্য চুপ থাকল। “আমি ভালো আছি। তুমি কেমন?”
“ভালো,” সায়নী বলল, কিন্তু তার চোখে অদ্ভুত এক দুঃখের ছায়া পড়েছিল। “আমার জীবন এখন বদলে গেছে। কিন্তু তুমি তো সবসময় মনে পড়ে। আমাদের বন্ধুত্বের সময়গুলো সব সময় মনে পড়ে।”
রাহুলের হৃদয়ে এক শূন্যতা অনুভূত হলো। সে জানত, তাদের প্রেমের গল্পটা আর সম্ভব নয়, কিন্তু সায়নীর কথা শুনে মনে হলো, সে এখনও কিছুটা বেঁচে আছে।
সায়নী, রাহুল বলল, “আমরা হয়তো আলাদা পথে চলে গেছি, কিন্তু স্মৃতি সব সময় রয়ে যাবে। ভালোবাসা কখনো হারিয়ে যায় না, শুধু সময়ের সাথে বদলে যায়।
সায়নী মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। তারা দুজনেই নিজেদের জীবন নিয়ে কথা বলল, কিন্তু তাদের মধ্যকার সেই গভীর সম্পর্কের সুত্রটা আর টানা সম্ভব ছিল না। রাহুল বুঝতে পারল, স্মৃতির ছায়ায় বাঁচতে থাকা একা জীবনের সবচেয়ে কঠিন যুদ্ধ।
সুতরাং, সে তার অতীতকে সঙ্গী করে নিয়ে নতুনভাবে বাঁচার চেষ্টা করল। জীবনের বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে, সায়নীর সুখের জন্য নিজের ভালোবাসাকে অভিবাদন জানাল।
0 মন্তব্যসমূহ