নিশ্চুপ পাহাড়ি গ্রাম - এই গ্রামের মানুষকে সতর্ক করাই তার দায়িত্ব - Story Banglaa - স্টোরি বাংলা

 

নিশ্চুপ পাহাড়ি গ্রাম - এই গ্রামের মানুষকে সতর্ক করাই তার দায়িত্ব - Story Banglaa - স্টোরি বাংলা - bangla golpo - thriller story - love story - short story - choti golpo - bhuter golpo - se"x story bangla
নিশ্চুপ পাহাড়ি গ্রাম


শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে। চিরসবুজ গাছপালায় মোড়া নির্জন পাহাড়ি গ্রামটি যেন শহরের ব্যস্ততা থেকে বিচ্ছিন্ন। এই নিরিবিলি পরিবেশে, প্রকৃতির নৈঃশব্দ্যের মধ্যে বসে লেখালেখির জন্য আদর্শ জায়গা খুঁজে পেয়েছেন ঋতোম। ঋতোম কলকাতার একজন বিশিষ্ট লেখক, মূলত ভৌতিক আর রহস্য গল্প লেখার জন্য বিখ্যাত। তার নতুন গল্পের জন্য কিছু অদ্ভুত এবং অনন্য অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। তাই তিনি শহর ছেড়ে এসেছেন এই পাহাড়ি গ্রামে।


গ্রামের নাম বালুকাঁঠি। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে অবস্থিত এই গ্রামে প্রকৃতি আর নীরবতার মেলবন্ধন। এখানকার মানুষগুলোও খুব শান্ত স্বভাবের, তেমন কারো সাথে তেমন কোনো ঘনিষ্ঠতা নেই। কিন্তু ঋতোম লক্ষ্য করলেন, গ্রামের লোকজন এক বিশেষ জায়গা নিয়ে বেশ সতর্ক এবং ভীত। গ্রামের উত্তরের দিকে একটি পুরানো বন আছে। সেখানে কিছু গাছের পাতা সবসময় মরে থাকে এবং সন্ধ্যা নামতেই সেই জায়গাটা একদম শুনশান হয়ে যায়। গ্রামের মানুষদের কাছ থেকে শোনা গেল যে, সেই বনের কাছে যেতেই কেউ সাহস পায় না। সবাই সেই এলাকাটাকে অভিশপ্ত মনে করে।


প্রথমদিকে ঋতোম এইসব কথা তেমন গুরুত্ব দেননি। তিনি গ্রামের পরিবেশ আর নির্জনতায় মুগ্ধ হয়ে গল্প লেখায় মনোযোগ দিলেন। কিন্তু দিনের পর দিন সেই বনের ভীতিকর গল্প শুনে তার মনে কৌতূহল জন্মাতে শুরু করল। কেন এই বনের কাছে কেউ যেতে চায় না? সত্যিই কি এখানে কিছু অলৌকিক ঘটনার অস্তিত্ব আছে? রহস্যের প্রতি আকর্ষণ তাকে সেখানে যেতে বাধ্য করল।


একদিন সন্ধ্যাবেলা, ঋতোম একা বের হলেন সেই বনের দিকে। সূর্য ডোবার ঠিক আগ মুহূর্তে সেই বনের কিনারায় এসে দাঁড়ালেন তিনি। প্রকৃতির নিবিড় নীরবতা যেন আরও বেশি গাঢ় হয়ে গেল। সূর্যাস্তের পরপরই বনের ভিতর একটা অদ্ভুত আওয়াজ শোনা গেল, যেন কেউ ফিসফিস করে কথা বলছে। ঋতোম থমকে দাঁড়ালেন, কৌতূহল আর ভয়ের এক অদ্ভুত মিশ্রণে তিনি সেই আওয়াজের উৎস খুঁজতে লাগলেন।


বনের ভেতরে কিছুটা এগোতেই একটি মরা গাছের নিচে দাঁড়ানো এক ছায়ামূর্তি দেখতে পেলেন তিনি। মূর্তিটি ঝাপসা, যেন আলোর ছায়ায় গড়া। ঋতোম চোখ কচলে দেখলেন, মূর্তিটি ধীরে ধীরে তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে। আতঙ্কে তিনি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে গেলেন। হঠাৎ মূর্তিটি এক প্রচণ্ড বিকট আওয়াজ করল এবং সারা বনের মধ্যে সেই শব্দ প্রতিধ্বনিত হল। ঋতোম পিছু হঠতে গিয়ে একটা শাখায় হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেন। এরপর আর কিছু মনে নেই।


পরের দিন সকালে গ্রামের এক বৃদ্ধ তাকে সেই বনের কাছ থেকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করল। বৃদ্ধ লোকটি তাকে তার নিজের ঘরে নিয়ে আসলেন এবং দেখলেন ঋতোম ভীত। তিনি বলেন, “আমরা তো আপনাকে বলেছিলাম, স্যার। ঐ বনে যেও না। সেই বনে অতৃপ্ত আত্মারা ঘুরে বেড়ায়।”


ঋতোম হেঁসে বললেন, “আমি নিজেই বিশ্বাস করি না ভূতের ব্যাপারে। কিন্তু যা দেখলাম, তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। কেন এখানে কেউ যেতে চায় না?”


বৃদ্ধ ধীরে ধীরে বললেন, “এখন থেকে পঞ্চাশ বছর আগে এখানে এক দারুণ দুর্ঘটনা ঘটে। পাহাড়ের ওই বনের ভেতরে বেশ কিছু লোক পথ হারিয়ে যায় এবং তাদের আর কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের আত্মাগুলো এখনো মুক্তি পায়নি।”


ঋতোম ভাবলেন, হয়তো সত্যিই কিছু আছে এই বনে। পরের কিছুদিন তিনি বনের কথা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু মনের গভীরে সেই মূর্তিটির কথা তাকে ক্রমাগত তাড়া করে ফিরল। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, এবার গভীর রাত্রে আবার বনে যাবেন।


পরের সপ্তাহে পূর্ণিমার রাত। ঋতোম বনের দিকে পা বাড়ালেন। মধ্যরাত্রি পার হয়েছে, চারপাশ একদম স্তব্ধ। বনের ভেতরে ঢুকে ধীরে ধীরে এগোতে লাগলেন। হঠাৎ তার সামনে একটি বড় গাছের নিচে বেশ কিছু আলোর ঝলকানি দেখলেন। মৃদু আলোর উৎস দেখে তিনি সামনে এগিয়ে গেলেন। গাছের নিচে মাটিতে লাল রঙের মতো কিছু ফুটে রয়েছে।


বেশ কিছুক্ষণ পর সেই আলোর ঝলকানি থেমে গেল এবং একটা অদ্ভুত ফিসফিস আওয়াজ শোনা গেল, যেন কেউ তাকে সাহায্যের জন্য ডাকছে। ঋতোম সেই ডাকে এগিয়ে গেলেন। দেখতে পেলেন একটা লাল জামা পরা মেয়ের ছায়া, মেয়েটি হাত নেড়ে যেন ঋতোমকে এগিয়ে যেতে বলছে। মেয়েটির অদ্ভুত নিষ্প্রাণ চোখ দেখে তার গা শিউরে উঠল। হঠাৎ সে মেয়েটি বলল, “তুমি কি আমাকে সাহায্য করতে পারবে?”


ঋতোম ভয়ে গা শিউরে উঠল। তিনি সাহস করে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কে? এখানে কেন?”


মেয়েটি বলল, “আমার নাম মৃণাল। এই বনে পথ হারিয়ে গিয়েছিলাম, আর কখনো ফিরে যেতে পারিনি। আমার আত্মা এখনো মুক্তি পায়নি। আমাকে মুক্ত করো, দয়া করে।”


ঋতোম বুঝলেন, এই মেয়েটি সেই হারিয়ে যাওয়া লোকদের একজন। তিনি বললেন, “আমি কীভাবে তোমাকে মুক্ত করতে পারি?” মেয়েটি কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলল, “এখানকার প্রতিটি মানুষকে সতর্ক করো যেন এখানে কেউ না আসে। আমি তখন মুক্তি পাব।”


ঋতোম দ্রুত বনের বাইরে বেরিয়ে এলেন। তিনি জানেন, এই গ্রামের মানুষকে সতর্ক করাই তার দায়িত্ব। পরদিন তিনি সবাইকে বললেন সেই রাতের অভিজ্ঞতা, আর সতর্ক করলেন যেন কেউ এই বনের কাছে না যায়।


গ্রামের লোকেরা আজও সেই বনের কাছে যায় না, আর ঋতোম জানেন, তিনি একজন অতৃপ্ত আত্মার মুক্তির পথে সামান্য হলেও অবদান রাখতে পেরেছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ