গুপ্তধনের প্রলোভন |
শান্ত, সুস্বাদু সকালে বসে আছেন আদিত্য, যখন তার মোবাইলের স্ক্রিনে একটি মেসেজ এল। মেসেজটি ছিল তার পুরনো বন্ধু দেবের। “আদিত্য! আমি একটি পুরনো মানচিত্র পেয়েছি। এটা আমাদের জন্য একটি গুপ্তধন খোঁজার সুযোগ! তুমি কি আসবে?” আদিত্য আনন্দিত হয়েছিল। ছোটবেলা থেকেই সে এবং দেব একসাথে অনেক অভিযান করেছিল। তারা সবসময়ই গুপ্তধনের খোঁজে ছিল, তবে কখনোই সফল হতে পারেনি।
দেবের মেসেজ পড়ার পর আদিত্য তার খুঁজে পাওয়া পুরনো গোপন মানচিত্রের কথা ভাবতে লাগল। মানচিত্রটি সেগুনের একটি বড় বাক্সের নিচে লুকানো ছিল, যা তাদের পুরনো পায়ের চিহ্নগুলো থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। মানচিত্রটি একটি পুরানো গুহার দিকে নির্দেশ করছিল, যা শহরের বাইরে একটি দুর্গম জঙ্গলে অবস্থিত ছিল। পরদিন সকালে, আদিত্য এবং দেব সঙ্গী হিসেবে তাদের দুই বন্ধুকে, রিয়া এবং সানি, নিয়ে গুহার দিকে যাত্রা শুরু করল। তারা গাড়িতে চড়ে কিছু সময় পরে জঙ্গলে পৌঁছালো। পরিবেশটি ছিল শান্ত, তবে একটি অদ্ভুত ভয়াবহতা অনুভব হচ্ছিল। গুহার মুখ দেখতে পাচ্ছিল না, তবে মানচিত্রের নির্দেশ অনুযায়ী তাদেরকে হাঁটতে হচ্ছিল। কিছু সময় হাঁটার পর তারা গুহার মুখে পৌঁছাল। গুহার মুখটি বিশাল, আর ভেতরে অন্ধকার দেখা যাচ্ছিল। দেব একটি টর্চ বের করে সেটি জ্বালাল। আলো যখন ছড়িয়ে পড়ল, তখন গুহার ভেতরে বিভিন্ন ছবি ও লেখা দেখা গেল। “দেখো! এখানে কিছু লেখা আছে!” রিয়া বলল। তারা আরও কাছে গিয়ে দেখল, গুহার দেয়ালে একটি প্রাচীন ভাষায় লেখা আছে, যা তাদের বুঝতে কিছুটা সময় লাগল। দেব গুহার দেয়ালে লেখা পড়তে লাগল, “যে ব্যক্তি এই গুপ্তধন খুঁজবে, তাকে সাহসী হতে হবে। কিন্তু মনে রেখো, এই গুপ্তধন কেবল ধনই নয়, বরং এই জায়গার রক্ষা করা ও সম্মান জানানো দরকার।” “এটা কি সম্ভব?” আদিত্য জিজ্ঞেস করল। “কেমন সম্মান জানানো?” “মনে হয় এখানে কিছু গোপন রীতি আছে,” দেব বলল। “আমরা যদি এই গুপ্তধন খুঁজতে চাই, তবে আমাদের প্রথমে গুহার সত্যিকারের গুরুত্ব বুঝতে হবে।” “ঠিক বলেছ। আসুন আমরা একটু এগিয়ে যাই,” সানি বলল। তারা সবাই একটু অনিচ্ছা নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল। গুহার ভেতরের পরিবেশ ছিল অন্ধকার, কিন্তু কিছুক্ষণ পরে তারা দেখতে পেল গুহার ভিতরকার একটি বড় ঘর। সেখানে ছিল একটি বিশাল পাথরের সিংহ, তার মুখে একটি পুরনো টুকরো। দেব, রিয়া, আদিত্য এবং সানি চারজন একসাথে সামনে এগিয়ে গেল। “এটা দেখতে ভয়ঙ্কর!” রিয়া বলল। “কিন্তু আমরা কীভাবে এই টুকরোটিকে সরাব?” “দেখো, সম্ভবত টুকরোটি সরানোর আগে আমাদের কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। গুহার দেয়ালে লেখা ‘যার মানসিকতা দৃঢ়, সে তার পথে যাবে,’” দেব বলল। আদিত্য পাথরের সিংহের সামনে দাঁড়াল। “আমাদের কি প্রশ্ন করা হবে?” সেই মুহূর্তে সিংহের মুখে একটি আলো দেখা গেল। “যার পথে হেঁটে যাও, তাকে প্রশ্ন করব আমি। যদি উত্তর সঠিক হয়, তবে তুমিই পাবে গুপ্তধন।” সিংহের একটি গভীর গম্ভীর কণ্ঠ ছিল। আদিত্য ভাবতে লাগল। “আমরা কি প্রস্তুত?” “আমরা প্রস্তুত,” দেব বলল। “আমাদের সাহসী হতে হবে।” সিংহ বলল, “প্রথম প্রশ্ন—তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে সাহসী কে?” “এটা কঠিন প্রশ্ন,” সানি বলল। “সবার মধ্যেই সাহস আছে।” সিংহ বলল, “যদি তোমরা সঠিক উত্তর না দাও, তবে তোমাদের ফিরে যেতে হবে।” “আমরা সবাই সাহসী, কিন্তু আদিত্য আমাদের নেতা,” রিয়া বলল। “ঠিক আছে। এবার তুমি সাহসী নেতা। দ্বিতীয় প্রশ্ন—অন্ধকারে চলার সময় তোমার প্রথম চিন্তা কী?” আদিত্য চিন্তা করল। “আমার প্রথম চিন্তা হচ্ছে, আমি কীভাবে নিরাপদে এই জায়গা অতিক্রম করতে পারি।” সিংহ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল, তারপর বলল, “ভাল উত্তর। তবে তৃতীয় প্রশ্ন—গুপ্তধন পাওয়ার পর তুমি কী করবে?” আদিত্য কিছুটা সময় নিয়ে উত্তর দিল, “আমি অন্যদের সাহায্য করব। এই গুপ্তধন কেবল আমার নয়, আমাদের সবার।” সিংহ কিছুক্ষণ নীরব থাকল, তারপর বলল, “সঠিক উত্তর। তুমি সফল হয়েছে। গুপ্তধন তোমার সামনে।” সিংহের মুখের পাথরের টুকরোটি সরে গেল। সেখানে একটি বিশাল গহ্বর দেখা গেল, যেখানে আলো ঝলমল করছিল। “এটা তো অবিশ্বাস্য!” রিয়া চিৎকার করে বলল। তারা সবাই ভিতরে ঢুকে পড়ল। ভিতরে প্রবেশ করার পর, তারা দেখতে পেল বিভিন্ন প্রাচীন রত্ন এবং ধন-দৌলতের পাহাড়। “এটি সত্যিই গুপ্তধন!” সানি আনন্দে চেঁচিয়ে উঠল। “কিন্তু এখানে একটি সমস্যা আছে। আমরা কীভাবে এসব অর্থ এবং রত্ন নিয়ে ফিরবো?” আদিত্য চিন্তা করতে লাগল। “আমরা যতটা সম্ভব আমাদের সঙ্গে নিয়ে যেতে পারি। কিন্তু মনে রেখো, এই গুপ্তধনের প্রতি আমাদের দায়িত্বও আছে। আমাদের এর সঠিক ব্যবহার করতে হবে।” তারা কিছু রত্ন এবং ধন সংগ্রহ করতে শুরু করল। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা একটি অদ্ভুত আওয়াজ শুনতে পেল। “কি হচ্ছে?” রিয়া বলল। “দ্রুত! আমাদের বেরোতে হবে!” দেব বলল। অলপক্ষ থেকে একটি ভয়াবহ আওয়াজ আসতে লাগল। আদিত্য এবং তার বন্ধুদের দৌড়াতে শুরু করল। তারা গুহার বাইরে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করছিল, কিন্তু বাইরে এসে দেখতে পেল গুহার মুখে একটি অদ্ভুত অন্ধকার ছায়া। “এটা কি?” সানি ভীত হয়ে বলল। “আমরা সম্ভবত গুহার অভিশাপের শিকার হচ্ছি,” দেব বলল। “আমাদের কিছু করতে হবে!” আদিত্য চিন্তা করতে লাগল। “আমরা যদি আমাদের সাহস না হারাই, তবে আমরা এই অন্ধকারকে অতিক্রম করতে পারব।” সকলেই একসাথে হতে শুরু করল এবং তাদের সবার সাহস নিয়ে তারা অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। গুহার অন্ধকারের মধ্যে তাদের সহযোগিতা, সাহস এবং বন্ধুত্ব তাদের গতি বাড়াতে সহায়ক হল। একসময়, তারা আবার গুহার মুখে পৌঁছালো এবং সেখানে সূর্যের আলো তাদের মুখে পড়ল। গুহার অন্ধকারের প্রভাব তাদের থেকে দূরে সরে গেল। তারা বেরিয়ে এসে স্বস্তি অনুভব করল। “আমরা সফল হয়েছি!” রিয়া আনন্দে চিৎকার করে বলল। “এবং আমাদের বন্ধুত্ব আরও শক্তিশালী হয়েছে,” দেব বলল। আদিত্য জানত, গুপ্তধন কেবল তাদের শারীরিক লাভ নয়, বরং এটি তাদের জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা। তারা বুঝেছিল, আসল গুপ্তধন হল তাদের সম্পর্ক, সাহস এবং একসাথে থাকা। তারা বাড়ি ফিরে আসার পর, আদিত্য ঠিক করল যে তারা এই গুপ্তধনটি সমাজের কাজে ব্যবহার করবে। তাদের অভিজ্ঞতা ও সাহস নিয়ে তারা নতুন কিছু করতে প্রস্তুত ছিল। গুপ্তধনের প্রলোভন তাদের জীবনকে নতুন করে গড়ে তুলেছিল এবং তারা প্রস্তুত ছিল নতুন অভিযানে বেরোতে। এভাবেই আদিত্য এবং তার বন্ধুরা একটি নতুন অভিযানের জন্য প্রস্তুত হল, যেখানে তাদের সাহস এবং বন্ধুত্বের গল্প নতুন করে লেখা হবে। |
0 মন্তব্যসমূহ