গোপন সিঁড়ি - সিঁড়িটা অদ্ভুতভাবে সরু - স্টোরি বাংলা - Story Banglaa

 

গোপন সিঁড়ি - সিঁড়িটা অদ্ভুতভাবে সরু - স্টোরি বাংলা - Story Banglaa
গোপন সিঁড়ি

রাত তখন প্রায় বারোটা। সদ্য গ্রাম থেকে ফিরেছে আরাফ। তাদের পুরোনো জমিদার বাড়িটা প্রায় একশো বছরের পুরোনো। দাদু মারা যাওয়ার পর কেউই এই বাড়িটায় আসতে চাইতো না। বাবা-মা দুজনেই শহরে চাকরি করতেন, আর তাই এই বাড়িটা প্রায় পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিল। আরাফ শৈশবে দাদুর কাছে এসে ক’দিন থাকতো, কিন্তু বছর কেটে গিয়েছে এই বাড়ির সঙ্গেই তার কোনও সম্পর্ক ছিল না। এইবার ফিরে আসার পর, মনে হলো যেন বাড়িটা আরও বেশি নীরব, আরও বেশি অন্ধকার।


ঘুমানোর আগে একটা বই পড়ছিল আরাফ। হঠাৎ জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই কেমন অস্বস্তি হলো। মনে হলো যেন কারও ছায়া ভেসে উঠল। গা ছমছম করে উঠলো। "বোধহয় চোখের ভুল," নিজেকে বোঝাল আরাফ। তবে একবার ঘুরে দেখতে ইচ্ছে করল। টর্চ নিয়ে বাড়ির বাইরে গেলো।


বাড়ির পিছনের দিকটা একসময় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তবে এবার ফিরে এসে সে বুঝতে পারলো সেখানে একটা বড় গাছ পড়ে আছড়ে পড়ে আছে। সেই গাছের আড়ালে যেন কিছু একটা লুকিয়ে আছে। টর্চের আলো ফেলতেই দেখা গেল একটা পুরোনো সিঁড়ি, যেটা আগে কখনও দেখেনি। মনে পড়লো না এ সিঁড়ি কোথা থেকে আসল। ভয়ে ভয়েই আরাফ সিঁড়ির দিকে এগোল।


সিঁড়িটা অদ্ভুতভাবে সরু, পুরোনো কাঠের, এবং ভাঙাচোরা। নিচে নামতেই অন্ধকার আরও ঘনীভূত হলো। সিঁড়ি শেষ হলে একটা পুরোনো দরজা, সেটার হাতলে মরিচা ধরে গেছে। দরজাটা যেন চিরকালের মতো বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু কৌতূহল দমন করতে না পেরে আরাফ দরজাটা ধাক্কা দিল। কড়াকড় আওয়াজ করে দরজাটা খুলল। ঘরের ভেতর ঢুকতেই চমকে উঠল আরাফ। ঘরের মেঝেতে ছড়ানো কিছু পুরোনো নথি, ভাঙা আয়না, আর দাদুর কিছু ব্যক্তিগত জিনিস।


আশ্চর্যজনকভাবে, ঘরের দেয়ালে একটা ছবি ঝুলছে। ছবি দেখে আরাফের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। ছবিতে তার দাদু আর এক অচেনা লোকের ছবি ছিল, যার পাশে আরাফের বাবার নাম লেখা ছিল! তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, তার বাবা এই লোককে কোনোদিনই চেনেন না বলেই জানিয়েছেন।


আরাফ ছবি আর নথি দেখে বুঝতে পারল যে এই অচেনা লোকই ছিল তার বাবার আসল বাবা। তার দাদু এই সত্যটা কখনও কাউকে বলেননি, এমনকি তার বাবাকেও না। আরাফ বুঝল, এই রহস্যটা পরিবারের মধ্যে লুকিয়ে ছিল, আর সে ভুল করেই সেটা আবিষ্কার করেছে।


হঠাৎ করেই ঘরের আলো নিভে গেল, আর একটা ঠাণ্ডা বাতাস ঘরের ভেতর ঢুকে গেল। যেন কেউ তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে! ভয়ে পেছনে ঘুরে তাকাতেই দাদুর ছায়ার মতো একটা অবয়ব দেখল। ছায়াটা ক্রমে মিলিয়ে গেল, কিন্তু আরাফের মনে হলো যেন কেউ একটা গোপন কথা তাকে শোনাতে চেয়েছিল।


কৌতূহল আর ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকা আরাফ সেই ঘর থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসে। দরজাটা পিছনে টেনে বন্ধ করে দিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করে। তার মনে একটা প্রশ্ন ঘুরতে থাকে, "এই সত্য জানার দরকার ছিল তো?"


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ