রহস্যময় চিঠি

 

রহস্যময় চিঠি

মহিমা ছিল এক শান্ত মেয়ে, জীবনের সাধারণ ছন্দেই চলছিল তার দিন। একদিন অফিস থেকে ফেরার পর সে বাড়ির দরজার সামনে একটা চিঠি পেল। চিঠিটা সাধারণ সাদা খামে ছিল, কোন প্রেরকের নাম নেই। কৌতূহল নিয়ে চিঠিটা খুলে পড়তেই স্তব্ধ হয়ে গেল মহিমা। চিঠিতে স্পষ্টভাবে তার অতীতের একটা ঘটনার উল্লেখ ছিল, যা কেবল সে আর তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন জানত।


চিঠিতে লেখা ছিল:  

"তোমার ভুলগুলো সবই আমার জানা। সময় হলে সবাইকে জানিয়ে দেবো।"


মহিমার শরীরে শীতল একটা স্রোত বয়ে গেল। এমন তো নয় যে তার জীবনে বড় কোন অপরাধ ছিল, তবে এমন কিছু ভুল বা লজ্জাজনক ঘটনা ছিল যা সবাই জানুক, তা সে চায়নি। কিন্তু কে এই ব্যক্তি? কার কাছে এইসব তথ্য আছে? প্রশ্নগুলো তাকে অস্থির করে তুলল।

প্রথম চিঠির পর এক সপ্তাহও কাটেনি, ঠিক তখনই আরেকটা চিঠি এল। এবার চিঠিতে তার কলেজ জীবনের কিছু ব্যক্তিগত ঘটনাও লেখা ছিল, এমন কিছু যা কেবল তার খুব কাছের এক বান্ধবী জানত। কিন্তু সেই বান্ধবী তো অনেকদিন আগেই বিদেশ চলে গিয়েছে। মহিমার মাথা কাজ করছিল না, বুঝতে পারছিল না কাকে সন্দেহ করবে।


চিঠিগুলো আসতে থাকে, প্রতিটি চিঠি যেন তার অতীতের গোপন কথা তুলে ধরতে থাকে। কখনও তার প্রথম প্রেমের কথা, কখনও তার কাজের ভুল। এ যেন একটা গোপন খেলা! চিঠিগুলো প্রতিবারই তাকে হুমকি দিয়ে বলে, “সবাইকে জানিয়ে দেবো, সময় থাকতে ঠিক হয়ে যাও।”


মহিমা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল এই রহস্যের শেষ দেখতে হবে। সে ঠিক করল চিঠিগুলোর প্রতিটা কথার সূত্র ধরে একজন একজন করে তার পুরনো বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করবে, যদি কারও কাছ থেকে কিছু বের করতে পারে। কিন্তু সবাই বলল যে তারা কিছুই জানে না।


একদিন রাতের বেলা, আবারও তার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হল। দরজা খুলতেই এক টুকরো কাগজ মাটিতে পড়ে গেল। এবার চিঠিতে শুধু একটা লাইন লেখা ছিল,  

“বহুদিন ধরে তুমি সত্য থেকে পালিয়ে আসছো, এবার পালানোর জায়গা নেই।”

কাঁপতে কাঁপতে মহিমা ফিরে তাকাল ঘরের ভেতর। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারল যে হয়তো তার নিজের মনেই এই গোপন কথাগুলো ছিল। সেই গভীর লুকানো স্মৃতিগুলো তার অবচেতন মনকে খোঁচাতে থাকায় সে নিজেই চিঠিগুলো লিখে গিয়েছিল। অতীতের দোষ-ভুলে ভরা গোপন অধ্যায়গুলো একপ্রকার তাকে প্রতারণা করেই তার নিজের ভেতর থেকে বারবার বেরিয়ে আসছিল।


মহিমা বুঝল, যতদিন না সে তার নিজের ভুলগুলোকে মেনে নেবে এবং ক্ষমা করবে, ততদিন এই আতঙ্ক তার পিছু ছাড়বে না। অতীতের ভুলগুলো সে কাগজে লিখে পোড়াতে লাগল। অবশেষে তার ভেতরের অপরাধবোধ ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ